রাশিয়ার মিকোয়ান কর্পোরেশনের তৈরি মিগ-২৯ ফাইটার জেট বিগত চার দশক থেকে ব্যাপক সফল ব্যাবসা করে গেলেও চরম আর্থিক সংকটের মুখে পরবর্তীতে মিগ-২৯ এর বিকল্প কোন জেট ফাইটার সার্ভিসে আনতে পারেনি। তবে দীর্ঘ বিরতির পর সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ান মিগ কর্পোরেশন তাদের নতুন প্রযুক্তির মিগ-৩৫ ফালক্রাম-এফ এর প্রডাকশন লাইন চালু করার একেবারেই ফাইনাল স্টেজে রয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়। যা আগের দুই রকম মিগ-২৯ বিমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে মিগ-৩৫ ফালক্রাম-এফ ফাইটার জেট তৈরি করতে যাচ্ছে রাশিয়া।
রাশিয়ার তৈরি মিগ-৩৫ বিমানটির ভয়ঙ্কর আক্রমন এবং দীর্ঘক্ষণ উড্ডয়ন সক্ষমতা নিশ্চিত করতে দুটি শক্তিশালী আরডি-৩৩এমকেবিএস থ্রাস্ট ভেক্টরিং কন্ট্রোল সিস্টেম (টিভিসি) আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যাবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি মিগ-৩৫ কে সুখোই সিরিজের জেট ফাইটারের চেয়ে যথা সম্ভব অপারেশন ও মেন্ট্যানেন্স কস্ট নামিয়ে আনা এবং অধিতকতর সহজ ও সংক্ষিপ্ত করার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে রাশিয়ান মিগ কর্পোরেশন।
মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ এ উন্নত একটিভ ইলেক্ট্রনিক্যাললী স্ক্যানড এ্যারি (এইসএএ) রাডার (Phazotron Zhuk AE AESA) সিস্টেম ও অপটিক্যাল লোকেটিং সিস্টেম (ওএলএস)সহ ১৬০ মডিউল বিশিষ্ট ‘জুক মা’ এ্যান্টেনা সযোজন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে আকাশ পথে ১৬০ কিলোমিটারের মধ্যে অগত টার্গেট চিহ্নিত করার পাশাপাশি ভূমিতে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে টার্গেট রাডার লক করতে সক্ষম।
মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ হচ্ছে হাইলি ম্যানুভারেবল সুপার এয়ার সুপিউরিটি রাশিয়ান ৪++ জেনারেশন জেট ফাইটার, যা অভ্যন্তরীন ভাবে ৯৫০ লিটার জ্বালানী ধারণ করতে পারে এবং ফিউজলেগে এক্সটা ফুয়েল ড্রপ ট্যাংকে সর্বোচ্চ ২,০০০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানী বহণ করতে সক্ষম। রি-ফুয়েলিং সুবিধা নিয়ে মিগ-৩৫ একাধারে ৫,৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কম্ব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম যেখানে নিজস্ব জ্বালানী ব্যাহার করে ৩,১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করতে পারে।এই জেট ফাইটারের সর্বোচ্চ গতি ২.২৫ ম্যাক ও কমব্যাট রেডিয়াস ১,০০০ কিলোমিটার। এছাড়া মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ সর্বোচ্চ ১৭,৫০০ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করতে সক্ষম এবং ম্যাক্সিমাম ম্যানুভারিং লোড ফ্যাক্টর ১০.০০ জি।
মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার তার ৯টি হার্ড পয়েন্টে সর্বোচ্চ ৬,৫০০/৭,০০০ কেজি পর্যন্ত আস্ত্র ও ক্ষেপনাস্ত্র বহণ করতে পারে। এছাড়া ইন্টারনাল ফিকসড ইউপন্স হিসেবে ১৫০ রাউন্ডের একটি এডভান্স ৩০ এমএম জিএসএইচ-৩০-১ স্মুথবোর ক্যানন সংযুক্ত করা আছে এবং এন্টিশীপ সিস্টেম হিসেবে ৮টি এয়ার টু সারফেস মিসাইল ও ৮টি এয়ার টু এয়ার মিসাইল সংযুক্ত করা আছে। পাশাপাশি থাকছে গাইডেড এন্ড আঙ্গাইডেড বোম্ব ও গাইডেড ও লেজার গাইডেড রকেট পড। তাছাড়া বিভিআর এএএম মিসাইল হিসেবে থাকছে আর-৭৭ ভ্যাম্পল মিসাইল। মিগ-৩৫ এর পার ইউনিট কস্ট ৫০-৬০ মিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে। যা প্রযুক্তিগত ভিন্নতা এবং ক্রেতার চাহিদা মাফিক নতুন সিস্টেম ইনস্টলের জন্য দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
রাশিয়ার মিকোয়ান কর্পোরেশনের তৈরি মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটারের প্রথম প্রটোটাইপ কপির সফল উড্ডয়ন পরীক্ষা সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে। এখনো পর্যন্ত ৭/৮টি প্রটোটাইপ কপি তৈরি করা হয়েছে এবং ২০১৮ সালের মধ্যে প্রডাকশন লাইন শুরুর কথা থাকলেও তা কিন্তু অনেকটা আর্থিক সংকটের মুখে ২০২০ এসেও ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন চালু করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে ম্যাসিভপ্রডাকশন লাইন শুরু হলে রাশিয়া প্রাথমিকভাবে ৪৮টি মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার তাদের নিজস্ব বিমান বাহিনীতে সংযোজন করতে ইচ্ছুক এবং পরিকল্পনা মাফিক ভবিষ্যতে এরুপ ১৭০টি জেট ফাইটার রাশিয়ার বিমান বাহিনীতে পর্যায়ক্রমে অন্তভুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া আন্তজার্তিক বাজারের প্রথম ক্রেতা হিসেবে মিশর ২৪টি মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ ক্রয় করার চুক্তি আগেই সম্পাদন করে রেখেছে। তবে যাই হোক না কেন রাশিয়ান মিগ-৩৫ এখনো কিন্তু চূরান্তভাবে সার্ভিসে না আসলেও এর পারফরম্যান্স মিগ-২৯ এর থেকে যথেষ্ঠ ভালো হতে পারে বলে আশা করা যায়।
তবে আমাদের প্রাণের প্রিয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বৈশ্বিকি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিফেন্স গোল-২০৩০ এর আলোকে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের মিগ-২৯ এর বিকল্প হিসেবে একসাথে ১৬টি বা এক স্কোয়াডন মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ মাল্টিরোল সুপার ম্যানুভার এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটার বা মার্কিন কিম্বা ইউরোপীয়ান সমজাতীয় ৪++ জেনারেশনের জেট ফাইটার ক্রয়ের বিষয়টি আমাদের সম্মানিত সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সম্মানিত রাষ্ট্রপতি তার এক ভাষণে অদূর ভবিষ্যতে ১৬টি এডভান্স এন্ড মাল্টিরোল জেট ফাইটার এবং আটটি এট্যাক হেলিকপটার ক্রয়ের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তবে এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা এবং আমাদের চরম শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর সাথে চীন এবং রাশিয়ার অত্যাধিক মাখামাখি সম্পর্ক বিদ্যামান থাকায় এবং পাশাপাশি বিশ্বের প্রথম সারির এভিয়েশন জায়ান্ট কর্পোরেশনগুলোর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় এনে বাস্তব যুদ্ধ জেট ফাইটারের প্রয়োগ ও গুনগত মান স্টাডি করেই আমাদের আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
The writing is the opinion of the author alone. It is not necessarily the view of DEFSECA or other third parties. If you would like to write on DEFSECA please contact us.